১৩ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত দিবস
প্রতি বছর ১৩ই মে পালন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (International Criminal Court - ICC) দিবস। এই দিনটি আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন, যা মানবতা বিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা ও আগ্রাসনমূলক অপরাধের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার স্মরণ করিয়ে দেয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) কী?
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসি বিশ্বের প্রথম স্থায়ী আন্তর্জাতিক আদালত, যা ব্যক্তিগত পর্যায়ে সংঘটিত সবচেয়ে গুরুতর অপরাধসমূহের বিচার করে। এই আদালত ১৯৯৮ সালের ১৭ই জুলাই গৃহীত ‘রোম সংবিধি’ (Rome Statute) অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০০২ সালের ১লা জুলাই থেকে কার্যক্রম শুরু করে।
এটির প্রধান কার্যালয় নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ-এ অবস্থিত। আইসিসি তখনই কোনো অপরাধের বিচার করে, যখন সংশ্লিষ্ট দেশের বিচারব্যবস্থা অপরাধীদের বিচার করতে ব্যর্থ হয় বা ইচ্ছুক নয়।
কেন ১৩ মে পালন করা হয়?
যদিও রোম সংবিধি ১৭ জুলাই গৃহীত হয়েছিল, তবুও ১৩ই মে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত দিবস পালন করা হয় আদালতের ভূমিকা ও মানবাধিকারের সুরক্ষায় এর গুরুত্বপূর্ণ অবদানকে স্মরণ করার জন্য। এই দিনে বিভিন্ন রাষ্ট্র, মানবাধিকার সংগঠন, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ ও সাধারণ মানুষ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের অবদান ও ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে আলোচনা করে।
এছাড়া এই দিনটি অপরাধের শিকার মানুষদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশেরও একটি সুযোগ।
এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্যগুলো হলো:
-
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কাজ ও গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা।
-
গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকারদের সম্মান জানানো।
-
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারকাজে বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা উৎসাহিত করা।
-
মানবাধিকারের বিষয়ে শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
-
অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করে ন্যায়বিচারের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনা।
আদালতের অর্জন ও চ্যালেঞ্জ
প্রতিষ্ঠার পর থেকে আইসিসি আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলের গুরুতর অপরাধের বিচার করেছে। উগান্ডা, কঙ্গো, সুদান, কেনিয়া ও লিবিয়া-সহ বহু দেশের যুদ্ধবাজ, রাজনৈতিক নেতা ও সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়েছে।
তবে এই আদালত নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। অনেক শক্তিশালী দেশ এখনও রোম সংবিধিতে স্বাক্ষর করেনি কিংবা সমর্থন প্রত্যাহার করেছে। অপরাধীদের গ্রেফতার ও বিচারে রাজনৈতিক চাপ, অর্থনৈতিক সংকট ও রাষ্ট্রীয় সহযোগিতার অভাব আইসিসির কাজকে কঠিন করে তুলেছে। তবুও, এটি আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
দিবসটি যেভাবে পালন করা হয়
১৩ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে:
-
আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের বিষয়ে সেমিনার, আলোচনা সভা।
-
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও প্রচার অভিযানের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি।
-
বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষামূলক আয়োজন।
-
যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকারদের স্মরণে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন।
উপসংহার
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, বিশ্বজুড়ে মানবাধিকারের লঙ্ঘন, গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের বিচার নিশ্চিত করা কতটা জরুরি। আইসিসি শুধুমাত্র অপরাধীদের শাস্তি দেয় না, বরং বিশ্বশান্তি, ন্যায়বিচার ও মানবমর্যাদা রক্ষায় একটি আশার আলো হয়ে আছে।
এই আদালত ও দিবসটি যেন ভবিষ্যত প্রজন্মকে ন্যায়বিচারের প্রতি বিশ্বাসী করে তোলে — সেটিই হোক আজকের অঙ্গীকার।
0 Comments